১ মানুষ প্রোগ্রামিং কেন করে?
জানো হুকুশ পাকুশ, মানুষের জীবনটা না খুব ছোট্ট। কিন্তু তারপরও না মানুষ অনেক বড় বড় জিনিস করতে চায়। মানুষ কবিতা লিখতে চায়, কাঠপেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে চায়, চাঁদে গিয়ে চুপ করে বসে থাকতে চায়। তারপর আবার চাঁদ থেকে বালু নিয়ে বাড়িও ফিরতে চায়। তারপর যখন অনেক রাত হয় আর পুরো আকাশটা ঝিকিমিকি নীল তারাতে ভরে যায়, মানুষ চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ছোট বাচ্চার মতো গালফোলা আগ্রহ নিয়ে বুঝতে চায় নীল তারাগুলোকে, আবছায়া ছায়াপথগুলোকে আর এই বিশাল বড় মহাবিশ্বটাকে।
কিন্তু মহাবিশ্বটা না অনেক বেশি বড় আর চাঁদটা অনেক বেশি দূরে। সেজন্য চাঁদে যেতে হলে কিংবা মহাবিশ্বকে বুঝতে গেলে না অনেক হিসেব নিকেশ করতে হয়। ধরো তুমি তোমার রকেট নিয়ে চাঁদে যাচ্ছো আর মাঝপথে একটা বোকাসোকা উল্কার সাথে বাড়ি খেয়ে তোমার গতিপথ পাল্টে গেলো। তুমি তোমার ঠিক করা কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়ে বৃহষ্পতির দিকে রওনা দিলে আর কিছুতেই হিসেব করতে পারলে না কিভাবে তুমি চাঁদে গিয়ে পৌছবে। তারপর তুমি যদি সত্যি সত্যি বৃহষ্পতিতে চলে যাও - কি পঁচা হবে ভাবো! তুমি তোমার পৃথিবী থেকে কত্ত দূরে - আর কত্ত দূরে তোমার সব বন্ধুদের থেকে!
এধরণের হিসেব নিকেশগুলো অনেক বড় হয়। পাতার পর পাতা ফুরিয়ে যায়, পেন্সিলের পর পেন্সিল হাপিস হয়ে যায়, রাতের পর রাত কেটে যায়। সূর্যটা সকালবেলা এসে হাই তুলে চোখ ডলতে ডলতে জানালায় উঁকি মেরে দেখে মানুষগুলো তখনো হিসেব কষছে।
আরো সমস্যা হচ্ছে কি জানো, মানুষ না খুব ভুল করে। তুমি খুব বিশ্বাস করে কাওকে তোমার কক্ষপথের হিসেব করতে দিলে, সে চুইঙগাম চাবাতে চাবাতে আর রেডিওতে গান শুনতে শুনতে একটা ইংরেজি 8 কে বাংলা ৪ বানিয়ে দিলো, আর সেই জন্য আধাপথে তোমার রকেটের তেল গেলো ফুরিয়ে!
১৮১২ তে চার্লস ব্যাবেজ ওর অফিসে বসে বসে এরকম কিছু হিসেব নিকেশ দেখছিলো। ওর খুব মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো হিসেবে ভুল দেখে। চার্লস ব্যাবেজ ভাবলো যদি মানুষগুলোকে যন্ত্রের মতো খাটতেই হয় এই হিসেব নিকেশগুলো করার জন্য, আমরা কেন একটা যন্ত্র বানাই না?
চার্লস ব্যাবেজের প্রথম কম্পিউটারটা ছিল ইয়া বড় আট ফিট লম্বা আর ওটার ওজন ছিল পনেরো টন! কিন্তু সেটার কাজ শেষ হবার আগেই ব্রিটিশ সরকার ওর উপর আশা ছেড়ে দিয়ে ওকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলো। তারপরও চার্লস ব্যাবেজ ওর পুরো জীবনটা খরচ করলো ওর স্বপ্নটার পেছনে যখন কেউই আর ওকে গুরুত্ব দিচ্ছিলো না। তারপর একদিন মন খারাপ করে মরে গেলো ব্যর্থ একটা মানুষ হয়ে।
তারপর প্রায় একশ' বছর পর যখন বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো জার্মানরা একটার পর একটা দেশ দখল করতে থাকলো ওদের প্রকান্ড সৈন্যবাহিনী নিয়ে। মিত্রবাহিনী দেখলো তারা কিছুতেই বুঝতে পারছে না এরপর জার্মানরা কি করবে। ওদের গোপন সংকেতগুলো ভাঙতে গেলে এত্ত বেশি হিসেব নিকেশ করতে হয় যে অনেক অনেক মানুষকে দিয়ে কাজ করালেও অনেকগুলো বছর লেগে যাবে সব সংকেতের মানে বের করতে। ততদিনে যুদ্ধ টুদ্ধ হেরে সবাই মরে ভূত হয়ে যাবে। তখন ওরা সবাই মিলে উঠে বসলো একটা যন্ত্র বানানোর জন্য যেটা জার্মানদের সংকেতের মানে উদ্ধার করতে পারবে। তারপর তারা একটা যন্ত্র সত্যি সত্যি বানালো - ঠিক যেরকম চার্লস ব্যাবেজ স্বপ্ন দেখতো বানানোর।
তারপর জার্মানি যখনই ঠিক করতো অমুক জায়গায় তমুক জাহাজটা টর্পেডো মেরে ডুবিয়ে দিবে, আর মিত্রবাহিনী আগে থেকে সেই টেলিগ্রামটার মানে বের করে ফেলতো আর সেই জাহাজগুলো সরিয়ে ফেলতো। তারপর সেই সংকেত ভাঙ্গা যন্ত্রগুলোর জন্য পৃথিবীটা বেঁচে গেলো। সেই যন্ত্রটাই ছিলো এখন তুমি যেই কম্পিউটারটাতে বসে বসে আমার লেখাটা পড়ছো, সেই কম্পিউটারের দাদুভাই।
কম্পিউটার খুব দারুণ একটা যন্ত্র, যে অনেক অনেক হিসেব নিকেশ করতে পারে। আর বহু বহু কিছু করতে পারে যেগুলো ভাবতে গেলে তোমার মাথা ঘুরে যাবে। কিন্তু কম্পিউটার না কখনো কিচ্ছু করে না, সব সময় মন খারাপ করে বসে থাকে। তারপর ওর কানে ফিসফিস করে বলা লাগে যে তুমি এটা করতে পারো, তুমি ওটা করতে পারো। তখন কম্পিউটার খুব খুশি হয়ে ভালো ছেলের মতো সব কিছু করে ফেলে।
এই যে কম্পিউটারকে ফিসফিস করে বলে দেয়া লাগে কিসের পর কি করতে হবে, এটাকেই বলে প্রোগ্রামিং। তুমি যখন কম্পিউটারের সাথে কথা বলতে শিখবে - তুমি যা বলবে কম্পিউটার ঠিক তাই করবে। কি অসাধারণ ব্যাপার না বলো?